শুধু বাংলাদেশ নয়। মহামারী করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে কেউই বাসার বাইরে যেতে চাননা। ঈদে নতুন জামা-কাপড়ের পাশাপাশি ঈদের দিন সেলামি দেওয়ার জন্য নতুন টাকার চাহিদা গত দুই বছর ধরে আগের মত নেই। তবে ভোক্তার চাহিদা বিবেচনা করে ব্যাংকের পাশাপাশি গুলিস্তানের মোড় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বসেছে নতুন নোটের বাজার।
গুলিস্তান মোড়ের নতুন নোটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ফুটপথে টুলের উপর নতুন নতুন নোট সাজিয়ে বেচাকেনা চলছে বেশ কয়েকটি দোকানে। চাহিদার উপর নির্ভর করে মুহুর্তের মধ্যে উঠানামা করছে নোটের দাম।
মো. আলাউদ্দিন মিয়া নতুন টাকা কিনতে এসেছেন গুলিস্তানের মোড়ে। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দেখলাম ক্রেতার সংখ্যা বাড়লেই নতুন নোটের বিনিময় মুল্য বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। আমি ১০ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল কিনেছেন ১ হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে। তার অল্প কিছুক্ষণ আগে আরেক ক্রেতা ১০ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল কিনেছেন ১ হাজার ১৮০ টাকা দিয়ে।
এবিষয়ে নতুন নোট বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা খরিদ্দারের কাছ থেকে দাম বেশি নিচ্ছি না। যে দরে কিনেছি, তার সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। আবার ১০০ টাকার নোটের বান্ডিলে বেশি নেওয়া হয় সর্বোচ্ছ ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে নতুন নোট বিনিময় কমে গেছে গেলো বছরের ঈদ থেকেই। যাদের অতি প্রয়োজন তারাই আসেন নতুন নোট নিতে। করোনার আগে যে পরিমান বিক্রি হতো করোনার পর পর থেকে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আলাউদ্দিন বলেন, ৫০ টাকার নোটের ১০০ টির একটি বান্ডিল ৫ হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিনিময় হচ্ছে। ২০ টাকার নোটের ১০০ টির একটি বান্ডিল ২ হাজার ৫০ টাকা, ৫০০ ও ১০০০ টাকার একশটির এক বান্ডিলের বিনিময়ের জন্য দিতে হচ্ছে বাড়তি ২০০ টাকা। ৫ টাকার নতুন নোট সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি। চাহিদা না থাকায় পাওয়া যাচ্ছে না ২ টাকার নোট।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কয়েকটি সরকারি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থেকে ঈদের আগে নতুন নোট বিনিময় করা হলেও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নতুন টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের করে বিক্রি করা হচ্ছে গুলিস্তানের মোড় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বট তলায়।
গুলিস্তানের আরেক নতুন টাকার বিনিময়কারী আলমাস হোসেন বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা খুব খারাপ। গেলো রোজার ঈদ থেকে শুরু হয়েছে এই অবস্থা। ঈদের আগে সাধারণ সময়ে যে পরিমান নতুন নোট বিনিময় হতো এখন তার চেয়ে অল্প কিছু বেড়েছে। বিগত সময়ে ঈদের আগে পরিমান নোট আমরা বিনিময় করেছি তা অর্ধেকে নেমে এসেছে করোনাকালীন ঈদে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পুলিশ বক্সের সামনেও একই দামে বিক্রি হচ্ছে নতুন নোট। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ এসে ধাওয়া দিয়ে উঠিয়ে দিলেও কিছুক্ষণ পরে আবারও পসরা সাজিয়ে বসে যাচ্ছেন বিক্রেতারা। চলছে বেচাকেনা।
এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে নতুন টাকা দেওয়া হলেও সেখানে ৫শ ও ১ হাজার টাকার নোট দেওয়া হয়। আর নতুন ক্রেতাদের অধিকাংশের চাহিদা রয়েছে ১০ থেকে ১০০ টাকার নোটের। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলা ও গুলিস্তানের মোড়ই একমাত্র ভরসা ঈদের আগে নতুন নোট প্রত্যাশীদের।