ঢাকা || ২৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রণোদনার ঋণ পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প

প্রণোদনার ঋণ পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প

ব্যাংকের কঠিন সব শর্তের কারণে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র  উদ্যোক্তাই রয়ে গেছেন সরকারের প্রণোদনা সুবিধার বাইরে। জামানত ছাড়া উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে উৎসাহী নয় ব্যাংকগুলো। 

এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের মাঝে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাবি জানানো হয়েছে ব্যাংকের বাইরে অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত করারও। 

ছোট ব্যবসা অল্প পুঁজি লাভ-লোকসানের হিসাব খুব বেশি নয়। দেশে এমন ক্ষুদ্র ও মাঝারী  কুটির শিল্পের সংখ্যা ৭৭ লাখের বেশি। সক্ষমতা কম তাই করোনার ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লেগেছে এই খাতে। 

হিসেব বলছে ৬৫ ভাগ আয় কমেছে এসব ব্যবসায়ীদের। ফলে ৭৫ ভাগ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধের ঝুকিতে পড়েছেন। সিএসএমইর ক্ষেত্রে এই হার ৫৮ শতাংশ। 

বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ এন্ড লিডিং ডেভলপমেন্টের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

এবিষয়ে সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস আহ্বায়ক ড দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ছোট মাঝারি এবং বড় শিল্পের ভিতরে ক্ষুদ্র শিল্প সেটা যদি কুটির পর‌্যায়ের হয়, মাইক্রো পর্যায়ের হয় অথবা ছোট বা মাঝারি হয় করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্যদের চেয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এবং তাদের আগামী দিনের চিন্তা সম্পর্কে দৃষ্টি ভঙ্গিটাও অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে নেতিবাচক। অর্থাৎ তারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় এবংশঙ্কা দেখছে। এবং ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই জিনিসটা খুব পরিস্কার ভাবে উঠে এসেছে। 

এদের সহায়তায় এপ্রিল মাসেই সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে চলতি মূলধন হিসেবে। 

কিন্তু আগস্ট পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন মাত্র ১১ হাজার ১৮৩ জন উদ্যোক্তা। ঋণ বিতরণ হয়েছে চার হাজার ১২০ কোটি টাকার। যা মোট প্যাকেজের ২০ দশমিক ৫শতাংশ মাত্র। 

ফন্ট টায়ার টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা চৌধুরী বলেন, জুলাইয়ের শেষে ঈদের পরে আগস্টের প্রথম দিকে ব্যাংক থেকে আমাদেরকে যোগাযোগ করতে বলেন। যোগাযোগ করার পরে আমাদের মর্টগেজ নিয়ে যেতে বলা হলো ঋণ নেওয়ার জন্য। যেহেতু অন্য ব্যাংকে ঋণ আছে তাই মর্টগেজ ছাড়া ঋণ দেওয়া যাবে না জানিয়ে দিলো।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অফ এসএমই আব্দুল মোমেন বলেন, ঋণ দিতে প্যাকেজের মধ্যে কোথাও জামানত দিতে হবে, ডিপোজিট দিতে এরকম কোনো  বাধ্যবাধকতা নাই। এখানে ব্যাংকের পলিসি এখানে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সুতরাং কোনো কোনো ব্যাংকের পলিসি এখানে ভিন্ন থাকতে পারে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন বড় ব্যবসায়ীদের মত বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ হলেও বাইরে থাকছে ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শাহ মাহমুদ বলেন আমি যখন মাইক্রো কটেজের কথা বলছি মিডিয়াম টাও এখানে নিয়ে আসছি। মিডিয়মিদের ব্যাংকের সঙ্গে যে সম্পর্ক আছে ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওই সম্পর্কটা নাই। 

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বলে দিতে পারে সিএসএমই খাতের জন্য জামানত লাগবেনা। এটা করা গেলে সিএসএমই খাতে তারল্যের প্রবাহটা বাড়তে পারে বলে আমি মনে করি। এটা না করলে ব্যাংকগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঋণ বিতরণ করবে না। 

সেই সাথে তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ এবং এসএমই বোর্ড গঠন করতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বড় গ্রাহকদের নিয়ম মেনে কাগজপত্র দাখিল করে ঋণ নিতে হচ্ছে। ছোটদের বেলায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঋণ পেতে হলে নূন্যতম কিছু কাগজপত্র তো জমা দিতেই হবে।