ঢাকা || ০১ জুলাই ২০২৫

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়ে ৮,৮৩৪ কোটি টাকা: এক বছরে বেড়েছে ৩,২৪৬ শতাংশ

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়ে ৮,৮৩৪ কোটি টাকা: এক বছরে বেড়েছে ৩,২৪৬ শতাংশ

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১৯ জুন ২০২৫

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য—মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ৩,২৪৬ শতাংশ। ২০২৩ সালের শেষে যেখানে এ পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি টাকা, ২০২৪ সালের শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৮,৮৩৪ কোটি টাকায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ফ্রাঁ প্রতি ১৪৯ টাকা হিসেবে এর মূল্য দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ বা ২৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা অর্থ বেড়েছে ৫৭ কোটি ১৮ লাখ ফ্রাঁ বা ৮,৫৭০ কোটি টাকা।

পেছনের বছরগুলোর চিত্র
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:

২০২৩: ২৬৪ কোটি টাকা

২০২২: ৮২৪ কোটি টাকা

২০২১: ১২,৯৯৬ কোটি টাকা

২০২০: ৮,৩৯৮ কোটি টাকা

২০১৯: ৮,৯৯৬ কোটি টাকা

২০২১ সালেই সর্বোচ্চ আমানতের রেকর্ড তৈরি হয়। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে কিছুটা কমলেও, ২০২৪ সালে আবারও বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়।

হঠাৎ এত অর্থ কোথা থেকে?
সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনে অর্থ জমার উৎস বা ব্যাখ্যা নেই। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা বাড়ায় আবারও ধনীরা এই ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমা রাখার দিকে ঝুঁকছেন। সুইজারল্যান্ড বিশ্বজুড়ে ধনীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই নির্ভরযোগ্য এক গন্তব্য হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে কর ফাঁকি ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ গোপনে রাখার জন্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অতীতে অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়েছে—এমনকি ২০২৪ সালেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। এই প্রবণতা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সবই কি অবৈধ অর্থ?
তবে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা মানেই তা অবৈধ বা পাচারকৃত—এমনটা বলা যাবে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক এবং প্রবাসী ব্যবসায়ীরাও বৈধভাবে সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ব্যবসায়িক কারণে সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে থাকে।

আরও কিছু প্রাসঙ্গিক দিক
সুইস ব্যাংকের হিসাব শুধুমাত্র নগদ অর্থ সংরক্ষণের তথ্য প্রকাশ করে। গচ্ছিত সোনা বা মূল্যবান সম্পদের হিসাব এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।

যদি কেউ নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রাখেন, তবে সেই অর্থও এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও অনেক অর্থ বৈধ পথেও যেতে পারে, তবুও এর পেছনে অবৈধ অর্থ পাচারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই তথ্যের পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে এখন প্রয়োজন স্বচ্ছ তদন্ত এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তথ্য বিনিময়ের উদ্যোগ।