ঢাকা || ০৯ মে ২০২৫

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে তীব্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে তীব্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ৯ মে ২০২৫

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি তার বৃহত্তম গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে পারে, কারণ চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিযোগীরা গত এক দশকে এই অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে—এমনটাই জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হলে প্রতিযোগিতার মাত্রা আরও বাড়বে, কারণ পাল্টা শুল্ক বৃদ্ধির ফলে অনেক দেশ তাদের রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য এনে ইইউতে ঝুঁকতে পারে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২ সালে চীনের মোট পোশাক রপ্তানির ৫৬ শতাংশ ইইউতে পাঠানো হতো, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৮ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৪৪ শতাংশ থেকে কমে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে।

ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে, ২০১২ সালে যেখানে ২৬ শতাংশ পোশাক ইইউতে রপ্তানি হতো, ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩২ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৭৪ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ শতাংশে।

কম্বোডিয়ার ২০২৩ সালে মোট পোশাক রপ্তানির ৬৩ শতাংশ গেছে ইইউতে, যা ২০১২ সালে ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৬০ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩৭ শতাংশে।

পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, ২০১২ সালে ৫২ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হতো ইইউতে, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৭১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৪৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২৯ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কার রপ্তানি ২০১২ সালে ৪৬ শতাংশ ছিল ইইউতে এবং ৫৪ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে, যা ২০২৩ সালে হয়েছে যথাক্রমে ৫৭ ও ৪৩ শতাংশ।

তবে ভারত ব্যতিক্রম। ২০১২ সালে ভারতের মোট পোশাক রপ্তানির ৪৮ শতাংশ ইইউতে এবং ৫২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে এই হার দাঁড়িয়েছে ইইউতে ৪২ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ২০১২ সালে যেখানে ৭২ শতাংশ গার্মেন্টস রপ্তানি ইইউতে হতো, ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২১ শতাংশ।

র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য আনতে হতে পারে, এবং ইইউ, জাপান ও কানাডা হতে পারে বিকল্প গন্তব্য।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইইউতে ২০ শতাংশের বেশি বাজার শেয়ার রাখে। ফলে নতুন প্রবাহ মূল্য প্রতিযোগিতা বাড়াবে, মুনাফার মার্জিন সংকুচিত করবে এবং ব্যবসার স্থায়িত্ব ঝুঁকিতে ফেলবে।”

তিনি সতর্ক করেন যে, “মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিনির্ভর দেশগুলো মুদ্রার অবমূল্যায়নের পথে হাঁটতে পারে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সংগ্রামরত বাংলাদেশের জন্য বিপদ আরও বাড়াবে।”

সাবেক বিকেএমইএ সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রমুখী স্থানীয় রপ্তানিকারকেরা অন্য দেশে, বিশেষ করে ইইউতে ঝুঁকলে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে এবং অভ্যন্তরীণভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর মূল্য প্রতিযোগিতা’ দেখা দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “যদি অন্য গার্মেন্ট উৎপাদনকারী দেশগুলোও একই পথ অনুসরণ করে, তাহলে বাজারের আকার অপরিবর্তিত থাকায় দাম কমে যাওয়ার চাপ প্রবল হবে।”

টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সাবেক বিজিএমইএ পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ব্যবসা সরলে ইইউতে চাপ তৈরি হবে। এর ফলে বিদ্যমান রপ্তানি আরও ধীরগতি হবে।”

তিনি বলেন, “এটি একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হবে, কারণ তখন প্রচণ্ড দামের চাপ আসবে।”

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা হ্রাস পেলে রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য মারাত্মক প্রভাব পড়বে।”

তিনি একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, “স্থানীয় রপ্তানিকারকেরা কি আগের মতো অর্ডার পাবেন?”

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, এবং অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে অর্ডার গ্রহণ করতে হচ্ছে শুধু শ্রমিকদের বেতন দিতে ও ব্যবসা সচল রাখতে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ইইউতে পোশাক রপ্তানি ৪.৮৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯.৭৭ বিলিয়ন ডলারে।

২০২৪ সালে ১.২৩ বিলিয়ন কেজি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ইইউতে, যা ২০২৩ সালের ১.১০ বিলিয়নের তুলনায় ১০.১৮ শতাংশ বেশি।

তবে কেজিপ্রতি গড় দাম ২০২৩ সালের ১৬.৮৮ ডলার থেকে ২০২৪ সালে নেমে এসেছে ১৬.০৭ ডলারে, যা ৪.৮৪ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে।

যদিও ২০২৪ সালে ইইউর মোট পোশাক আমদানির পরিমাণ মূল্য অনুযায়ী ১.৫৩ শতাংশ বেড়ে ৯২.৫৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, তবে ভলিউমে ৮.৯৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.২৭ বিলিয়ন কেজিতে, ফলে গড় ইউনিট দামে ৬.৮৩ শতাংশ পতন হয়েছে, যা বাংলাদেশসহ প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলোর ওপর প্রভাব ফেলেছে।