ঢাকা || ০২ মে ২০২৪

গ্রাহকের আস্থা কমেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর

গ্রাহকের আস্থা কমেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর

সময় মত গ্রাহকের অর্থ ফেরত না দেওয়া ও অনিয়মের কারণে দেউলিয়া হওয়ার কারণে ধারবাহিক ভাবে গ্রাহকের আস্থা কমেছে দেশে কার‌্যরত নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারই অংশ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত তুলে নিচ্ছেন।

গ্রাহকের আস্থা কমে যাওয়ার কারণে ধারাবাহিক ভাবে অর্থ উত্তোলনের কারণে ২০১৯ সালে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত বেশী তোলা হয়েছে ৫দশমিক ৩৩শতাংশ বা ২ হাজার ৪শ ২৮ কোটি টাকা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের হিসাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৪৫ হাজার ৫শ ৪৯ কোটি টাকা তুলেছেন গ্রাহক। আগের বছরের একই সময়ে গ্রাহকের টাকা তোলার পরিমান ছিল ৪৩ হাজার ১শ ২১ কোটি টাকা।

যদিও কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ব্যাংকিং খাতেও আমানত প্রবৃদ্ধি কমেছে। তারপরও করোনাভাইরাসের কারণে যখন দেশের ব্যবসা বাণিজ্য যখন প্রায় স্থবির তখনও আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১শতাংশের কাছাকাছি। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারীর কারণে গ্রাহকের আস্থা হারিয়ে গেছে। যে কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তোলার পরিমান অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যার ফলে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান খুবই খারাপ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জনসাধারণের আস্থাহীনতার পাশাপাশি অনেক ব্যাংকও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তহবিল তুলে নিয়েছে। নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল তুলে নেওয়া বন্ধ করতে উৎসাহ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানী অ্যাসোসিয়েশন।

নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেনে তোলার জন্য চলতি বছরের জুনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ জমা সংরক্ষণ হার অনুপাত ভিত্তিতে ১শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো  ৩৫০ কোটি বেশী ব্যবহার করতে পারছে।

অপর দিকে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো করোনাভাইরাস মহামারীতে আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও দিয়েছে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাক অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে কার‌্যরত ৩৪ টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রীন জোনে রয়েছে। বাকি ৩০ প্রতিষ্ঠানই ইয়োলো এবং রেড জোনে প্রবেশ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের ৯৬ দশমিক ৪৫শতাংশই স্থায়ী আমানত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ৪দশমিক ৬২শতাংশ বা ২ হাজার ৩৭ কোটি ৬১লাখ টাকা কমে দাড়িয়েছে ৪২ হাজার ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ হাজার ৬০ কোটি ২লাখ টাকা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ আমানত ৪২৮ কোটি ৯লাখ টাকা কমে দাড়িয়েছে ২৮১ কোটি ৪৩লাখ টাকায়। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭শ ৯ কোটি ৫২লাখ টাকা।

বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরত দিতে না পারার কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আমানতকারীদের আস্থাহীনতা তৈরী হয়েছে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, জনগনের টাকায় ব্যবসা করার জন্য সব সময় আমানতকারীর আস্থা অর্জন করতে না পারলে তা বেশী দিন স্থায়ী হয় না। শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় ব্যবসা করার জন্য সবধরণের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হয়।