
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর নির্বাচন আগামী ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগামী ১৭ জুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির প্রশাসন।
ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে নির্বাচনী বোর্ড ও আপিল বোর্ড। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫’ সংশোধন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতিসহ সব পদের প্রতিনিধিরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। নির্বাহী কমিটির মেয়াদ হবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২৪ মাস। কেউ টানা দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন করলে, পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে হলে একটি মেয়াদ বিরতি দিতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছি। ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতেই নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।”
সমর্থন ও বিরোধিতা—দুই মেরুতে ব্যবসায়ী মহল
নতুন বিধিমালাকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন এফবিসিসিআইয়ের ‘বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ’-এর নেতা জাকির হোসেন নয়ন, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকনসহ অনেকে। তাঁরা বলছেন, “এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এতে দেশের প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ ব্যবসায়ীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।”
অন্যদিকে ‘এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ’ ও ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ’-এর নেতারা নতুন বিধিমালার বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে, এই বিধিমালার কয়েকটি ধারা-উপধারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর জন্য মারাত্মকভাবে প্রতিকূল। তারা এ বিধিমালাকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করাকে সম্পূর্ণ অবৈধ ও ব্যবসায়ীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছেন।
‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ’-এর নেতা মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই বিধিমালায় ভোটারদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। অলাভজনক সংগঠনে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিধি-নিষেধ আরোপ সংবিধান পরিপন্থী। অতিরিক্ত ফি আরোপ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।”
তাঁরা বাণিজ্য উপদেষ্টা, এফবিসিসিআই প্রশাসক, ডিটিও, নির্বাচনী বোর্ড ও আপিল বোর্ড বরাবর বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
আগামীর পথচলায় সংস্কারের ছাপ
সংগঠনের একাংশ যেখানে নেতৃত্ব শূন্যতার আশঙ্কা করছেন, অন্য অংশ সেখানে নতুন নেতৃত্বের আগমন এবং একটি সক্রিয় ও গণতান্ত্রিক এফবিসিসিআই গঠনের সম্ভাবনা দেখছেন।
গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন বলেন, “সংস্কারের মাধ্যমেই আমরা এফবিসিসিআই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগোচ্ছি। এই বিধিমালাই ব্যবসায়ী সমাজে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।”
অন্যদিকে সংশোধনের পক্ষে থাকা নেতাদের মতে, এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, বরং দেশের ব্যবসা-সংগঠনগুলোর কাঠামোগত স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আধুনিকায়নের সূচনা।
শেষ কথা:
নতুন বিধিমালার মাধ্যমে এফবিসিসিআই নির্বাচন সামনে রেখে ব্যবসায়ী সমাজে চলছে মতবিভেদ ও আশা-নিরাশার দোলাচল। তবে সকলের অভিন্ন চাওয়া—একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।