
সরকার আশা করছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির (জিডিপি) আকার ৫১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। একই সঙ্গে এর আগের বছরেই মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) ৫১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
এই পূর্বাভাস উঠে এসেছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে প্রকাশিত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিপত্রে, যেখানে ২০২৮ পর্যন্ত জিডিপি, জিএনআই, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি-আমদানি ও মূল্যস্ফীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রক্ষেপণ অনুযায়ী,
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রাথমিক আকার ধরা হয়েছে ৪৬৩ বিলিয়ন ডলার,
২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি দাঁড়াবে ৪৮৭ বিলিয়ন ডলারে,
এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা পৌঁছাবে ৫১৪ বিলিয়নে।
অন্যদিকে, মোট জাতীয় আয় (জিএনআই)
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রক্ষেপিত হয়েছে ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার,
যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেড়ে ৫১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
অর্থ বিভাগের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই প্রক্ষেপণ তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের মডেল ব্যবহার করে, যা দেশের পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করা হয়েছে।
তবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো বলেন, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এখনও অনেকাংশে পুরনো তথ্যের ওপর নির্ভর করছে। বাস্তবচিত্র জানতে হলে নতুন জরিপ প্রয়োজন।” তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে জিডিপি অর্ধ-ট্রিলিয়নের গণ্ডি পার করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “জিএনআই বরাবরই জিডিপির চেয়ে বেশি, কারণ আমাদের অভিবাসীরা বিদেশে যে আয় করেন, তা দেশের জাতীয় আয়ে যুক্ত হয়।”
ধীর অর্থনৈতিক গতি ও উন্নয়ন সংস্থার সতর্কতা
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আরও সতর্ক পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে স্থবিরতা ও ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩-৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
বিবিএসের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী,
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৯৭ শতাংশ।
তবে অর্থ বিভাগ আশা করছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ধীরে ধীরে গতি পাবে এবং
২০২৭-২৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৫-৬.৫ শতাংশে পৌঁছাবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও আমদানি-রপ্তানির চ্যালেঞ্জ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রক্ষেপণ সংশোধন করে ২৬.৭ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল ৩১.৮ বিলিয়ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে ড. মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, এই লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের ওপর—বিশেষ করে, আমদানির প্রবৃদ্ধি কম (৬%) থাকলে এবং রপ্তানি দৃঢ় থাকলে।
তিনি বলেন, “আমদানির প্রবৃদ্ধি যদি এত কম থাকে, তবে তা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক নয়। আমাদের প্রয়োজন পুঁজির যন্ত্রপাতি আমদানির মাধ্যমে উৎপাদনশীল বিনিয়োগে জোর দেওয়া।”
সরকারের আশাবাদী পূর্বাভাসের বিপরীতে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা ও অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে কৌশলগত সিদ্ধান্ত, স্বচ্ছ পরিসংখ্যান ও টেকসই বিনিয়োগ হবে বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের অগ্রযাত্রার মূল চাবিকাঠি।