ঢাকা || ১৭ অক্টোবর ২০২৫

বিনিয়োগবান্ধব অর্থনীতি গঠনে নীতি ধারাবাহিকতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা জরুরি: অ্যামচ্যাম সেমিনারে বক্তারা

বিনিয়োগবান্ধব অর্থনীতি গঠনে নীতি ধারাবাহিকতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা জরুরি: অ্যামচ্যাম সেমিনারে বক্তারা

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ০১:৪০, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে জ্বালানি নিরাপত্তা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতি ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতি ও ব্যবসায়খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা শেরাটনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) আয়োজিত অ্যামচাম ইনসাইটস:ইকোনোমিক অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট আউটলুক শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা এ মত দেন। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালকড. ফাহমিদা খাতুন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (বিডা) নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব। সহযোগিতায় ছিল ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেড।

অ্যামচ্যামের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ এখন এক পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক পর্যায়ে রয়েছে। লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা, এনবিআর পুনর্গঠন এবং ব্যাংকিং খাতের সুশাসন—এসব সংস্কার দেশের স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব অর্থনীতি গঠনের সংকল্পকে প্রতিফলিত করছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিনিয়োগ আকর্ষণে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি দমন ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি ধারাবাহিকতা রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন তার প্রবন্ধে বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তরের মুখে রয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যদিও প্রবাসী আয় ও রপ্তানি কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। তবে মুদ্রাস্ফীতি ও স্থবির মজুরি বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।

তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণ, জলবায়ু সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিডা’র নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের সংস্কার, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং পুঁজিবাজারের ইতিবাচক ধারা বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও অনুকূল করেছে।

তিনি জানান, “মুদ্রাস্ফীতি এখন এক অঙ্কে নেমে এসেছে, শেয়ারবাজারে ১২.৫% প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।”

এছাড়া চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক-সুবিধা বিষয়ক আলোচনাও ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান (ডব্লিউটিও) বলেন, বাংলাদেশ সক্রিয় বাণিজ্য কূটনীতি অনুসরণ করছে। জাপান ও কোরিয়ার সঙ্গে সেপা বা এফটিএ আলোচনা চলছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক হ্রাস চুক্তি এলডিসি-পরবর্তী রপ্তানি সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, “জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাত, এসএমই ও রপ্তানিমুখী শিল্পে প্রবৃদ্ধি আনতে কাজ করছে সরকার।” তিনি জানান, “ওয়ান স্টপ সার্ভিস, অনলাইন অনুমোদন, ইলেকট্রিক ভেহিকেল নীতি ও নতুন লজিস্টিক নীতি প্রণয়নসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম চলছে।”

এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. বদরুজ্জামান মুনশি জানান, এনবিআর ইতোমধ্যে অ্যাডভান্স ট্যাক্স হ্রাস, ফ্রি জোন নীতি প্রণয়ন, ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা, ডিজিটাল রেকর্ডকিপিং ও বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে—যা আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।

অনুষ্ঠানে অ্যামচ্যামের কোষাধ্যক্ষ ও ন্যাটকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মামুন এম. রাসেল এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য ও অগমেডিক্স বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মুজিব নোমান উপস্থিত ছিলেন।