ঢাকা || ১৭ অক্টোবর ২০২৫

১৭ মাস পর ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি আবার দুই অঙ্কে, বাড়ছে গ্রাহক আস্থা

১৭ মাস পর ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি আবার দুই অঙ্কে, বাড়ছে গ্রাহক আস্থা

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

১৭ মাস পর ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আবারও দুই অঙ্কে ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট শেষে আমানত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১০.০২ শতাংশ, যা গত জুলাইয়ে ছিল ৮.৫০ শতাংশ।

এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ দ্বি-অঙ্ক প্রবৃদ্ধি (১০.৪৩%) রেকর্ড হয়েছিল। মার্চ ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সময়টায় ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কে সীমিত ছিল।

কেন বাড়ছে আমানত প্রবৃদ্ধি

ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার হ্রাসই আমানত বৃদ্ধির মূল কারণ। সরকারি সিকিউরিটিজে রিটার্ন কমে যাওয়ায় ব্যক্তি ও করপোরেট উভয় খাতের বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যাংকে অর্থ জমাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

কয়েক মাস আগেও ট্রেজারি ইন্সট্রুমেন্টে আয় ছিল ১১-১২ শতাংশের মধ্যে, যা এখন ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ফলে ব্যাংকের আমানতের হার ও সরকারি সিকিউরিটিজের হার প্রায় সমান হয়ে গেছে।

পুবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী বলেন, “ট্রেজারি বিল ও বন্ডের আয়ের হার কমে যাওয়ায় অনেক করপোরেট গ্রাহক এখন নতুন করে এসব ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যাংকিং খাতের বাইরে থাকা নগদ অর্থও কিছুটা কমেছে। মানুষ এখন কিছুটা বেশি সঞ্চয় করতে পারছে কারণ মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রবাসী আয়ের প্রবাহও ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

ব্যাংক এশিয়ার এমডি ও সিইও সোহেল আর.কে. হোসেন বলেন, “এর আগের অস্থিরতা ব্যাংকিং খাতে আমানত হ্রাস ঘটিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে আস্থা ফিরেছে। প্রবাসী আয় বাড়ায় টাকার প্রবাহও বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যখন ট্রেজারি ইন্সট্রুমেন্টের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছিল, তখন কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়েছিল। এখন হার কমে আসায় তারা আবার ব্যাংকেই অর্থ রাখছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তারল্য বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ দফায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি কিনেছে। এতে বাজারে তারল্য বেড়েছে এবং ব্যাংকগুলো তাদের আমানত ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারছে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নিলাম অনুযায়ী ট্রেজারি বিলের হার:

৯১ দিনের বিল – ৯.৫০%

১৮২ দিনের বিল – ৯.৭১%

৩৬৪ দিনের বিল – ৯.৬০%
এছাড়া ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছরের বন্ডে আয় যথাক্রমে ৯.৩৩%, ৯.৮৯%, ৯.৬৭% ও ৯.৭০%।

এক বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, “সঞ্চয়পত্রের হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকের আমানত এখন তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয়। প্রতিযোগিতামূলক সুদহার ও নতুন পণ্যও আমানত বাড়াতে সহায়তা করছে।”

ব্যাংকের বাইরে টাকার প্রবাহ কমছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.৭৬ ট্রিলিয়ন টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের ২.৯২ ট্রিলিয়ন টাকার চেয়ে ৫.৫ শতাংশ কম।

একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা ধীরে ধীরে আবার ব্যাংকিং খাতে ফিরে আসছে, যদিও পুরোপুরি নয়।”