
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত আমানতকারীরা তাদের জমাকৃত টাকা ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে ফেরত পাবেন।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে আমানত ফেরতের বিস্তারিত সময়সূচি বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। খসড়া গেজেটও প্রস্তুত হয়েছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। গেজেটে ঘোষিত তারিখ থেকেই ফেরত প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধারই এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য, তাই ব্যক্তিগত আমানত ফেরতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে ফেরত পাবেন আমানতকারীরা
তিন মাসের কম মেয়াদি চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের ক্ষেত্রে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত দেওয়া হবে।
বড় অঙ্কের আমানতের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা করে ছয় কিস্তিতে (৬ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে) ফেরত দেওয়া হবে। বাকি অর্থ ২৪ মাস পর যে কোনো সময় পরিশোধ করা হবে।
তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদি আমানতের প্রথম ২ লাখ টাকাও তাৎক্ষণিকভাবে তোলা যাবে। তিন মাসের আমানত তিনবার নবায়ন, ছয় মাসের আমানত দুইবার নবায়ন, আর এক বছরের আমানতও দুই দফা নবায়নের পর ফেরতযোগ্য হবে।
দুই বছরের আমানত তিন বছরে, তিন বছরের আমানত চার বছরে এবং চার বছরের আমানত পাঁচ বছরে রূপান্তরিত হবে। পাঁচ বছর বা তার বেশি মেয়াদি আমানত পূর্ণ মেয়াদ শেষে পরিশোধ করা হবে।
তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং ক্যান্সার আক্রান্ত আমানতকারীরা এসব শর্ত থেকে অব্যাহতি পাবেন।
অতিরিক্ত সুবিধা ও বিনিয়োগ সুযোগ
আমানতকারীরা তাদের মোট টাকার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা ঋণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
গেজেট কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাজারমূল্য অনুযায়ী লাভ (প্রফিট) প্রদান করা হবে।
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের নিট দায়ের বিপরীতে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার (Priority Share) ইস্যু করা হবে। এসব শেয়ারে প্রচলিত ব্যাংক লাভের হার প্রযোজ্য হবে।
অন্য প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরাও একই শর্তে শেয়ার পাবেন, তবে অন্তত পাঁচ বছর তা ধরে রাখতে হবে। এরপর এসব শেয়ার পুনরায় মেয়াদি আমানতে রূপান্তরিত হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড এই ব্যবস্থার বাইরে থাকবে।
নতুন ব্যাংকের নাম ও কাঠামো
একীভূত নতুন ব্যাংকের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে দুটি নাম:
‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’
‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’
এই ব্যাংকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের সম্পদ ও দায় একীভূত হবে।
নতুন প্রতিষ্ঠানে পাঁচ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি স্থানান্তরিত হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ নেই, তাদের চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। কেউ চাকরি চালিয়ে যেতে না চাইলে পদত্যাগ করে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা নিতে পারবেন। প্রতারণার অভিযোগে দোষী প্রমাণিতদের বরখাস্ত করা হবে।
নতুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন মোট নয়জন পরিচালক—এর মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এবং চারজন প্রধান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে। পরিচালকদের মেয়াদ হবে এক বছর।
ক্রমে বেসরকারিকরণ
প্রাথমিকভাবে নতুন ব্যাংকটি সরকারের মালিকানায় থাকবে, যেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রতিনিধিত্ব করবে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন বছরের মধ্যে ব্যাংকটিতে একটি কৌশলগত অংশীদার যুক্ত করা হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বেসরকারিকরণ করা হবে।