ঢাকা || ১৭ অক্টোবর ২০২৫

৩,৫০০ কোটি টাকার সহায়তা চায় পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘না’

৩,৫০০ কোটি টাকার সহায়তা চায় পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘না’

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ০২:০৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

গুরুতর আর্থিক সংকটে থাকা পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) ৩,৫০০ কোটি টাকার একটি বেইলআউট প্যাকেজ বা উদ্ধার তহবিল চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটি বাঁচিয়ে রাখার পরিবর্তে একীভূত বা লিকুইডেশনের (বিলুপ্ত) পথে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ (ডিওএস) ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার একটি ‘ডায়াগনস্টিক রিভিউ রিপোর্ট (ডিআরআর)’ তৈরি করেছে, যা এখন পাঠানো হচ্ছে নবগঠিত ব্যাংক রেজল্যুশন বিভাগে। এই বিভাগটি সদ্য প্রণীত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ বাস্তবায়ন করছে।

বর্তমানে বিভাগটি শরীয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক— একীভূত করার প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই অবস্থায় পদ্মা ব্যাংককে কোনো তারল্য সহায়তা দেওয়া অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।”

ডিওএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সব সূচকে অত্যন্ত দুর্বল। ব্যাংকের মূলধন এখন নেতিবাচক, এবং ৯২ শতাংশ ঋণ খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।

২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫,৫৯৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫,১৩১ কোটি টাকা খেলাপি। ব্যাংকের সুদের আয়ও নেতিবাচক, এবং তারল্য ঘাটতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, “এ অবস্থায় পদ্মা ব্যাংকে টাকা ঢালা মানে গর্তে পানি ঢালার মতো।”

ব্যাংকটি এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। গত বছরের আগস্ট থেকে প্রায় ৮৫০ কর্মী তাদের ব্যাংক হিসাবেই বেতন পেলেও একসঙ্গে পুরো টাকা তুলতে পারছেন না; ধাপে ধাপে উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জুনে ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা কমে ৬৫৩ জনে নেমে এসেছে।

পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. তলহা বলেন, “আমরা খুবই সংকটে আছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ব্যাংক চালাতে আমাদের অর্থ প্রয়োজন।”

তিনি জানান, পাঁচ শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলে পদ্মা ব্যাংককেও একীভূত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় জন্ম, অনিয়মে পতন

পদ্মা ব্যাংক ২০১৩ সালে ‘ফার্মার্স ব্যাংক’ নামে রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে লাইসেন্স পায়। শুরু থেকেই অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ৩,৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ অনিয়মের মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়।

২০১৫-১৬ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মালিকানা ও পরিচালনা পর্ষদে বড় পরিবর্তন আসে; আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহিউদ্দিন খান আলমগীর চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন।

ব্যাংকটিকে বাঁচাতে সরকার ২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় সহায়তা দেয়। সে সময় আইসিবি, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক মিলে ৭১৫ কোটি টাকায় ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

২০১৯ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে ‘পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড’ রাখা হয়, যাতে নতুন ভাবমূর্তি তৈরি হয়। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

গত বছর মার্চে সরকার যখন ১০টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা নেয়, তখন পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে ব্যাংক থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার আমানত তুলে নেয় গ্রাহকরা।

বর্তমানে ব্যাংকটির অপরিশোধিত আমানতের পরিমাণ প্রায় ৬,১০০ কোটি টাকা।