শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন একটি ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) এবং আরজেএসসি থেকে নামের ছাড়পত্র পেয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আমানত উত্তোলন, পুরোনো চেক ব্যবহার এবং অ্যাকাউন্ট স্থানান্তর নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
অমানত ফেরত: দুই লাখ টাকা তাৎক্ষণিক: সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, এক মাসের মধ্যেই গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তিনি বলেন—“২ লাখ টাকার নিচে আমানতকারীরা পুরো অর্থ তুলতে পারবেন। বৃহত্তর অঙ্কের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলন সময়সূচি গেজেটের মাধ্যমে জানানো হবে।” বড় অঙ্কের আমানতের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়জুড়ে গ্রাহকদের বাজারভিত্তিক মুনাফা প্রদান করা হবে।
অ্যাকাউন্ট ও শাখা পরিবর্তন হবে কীভাবে: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন ব্যাংকটির লাইসেন্স মিলতে পারে। এরপর পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের বিদ্যমান অ্যাকাউন্টগুলো অটোমেটিকভাবে নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে।
গ্রাহকরা বর্তমান শাখা থেকেই লেনদেন চালিয়ে যেতে পারবেন।
পুরোনো চেকবই দিয়ে কি টাকা তোলা যাবে: ইউনিয়ন ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আপাতত নতুন চেক ইস্যুর সুযোগ নেই। তাই—“গ্রাহকরা তাদের পুরোনো ব্যাংকের চেকই ব্যবহার করতে পারবেন, এবং যেকোনো শাখায় সেটি নতুন ব্যাংকের অধীনে অনার করা হবে।”
কীভাবে ধাপে ধাপে টাকা ফেরত পাবেন: উদাহরণ হিসেবে বলা হয়—কোনো গ্রাহকের ইউনিয়ন ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা থাকলে: নতুন ব্যাংক চালুর পর পুরো ২০ লাখই নতুন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হবে। ২ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক উত্তোলনযোগ্য। বাকি ১৮ লাখ টাকা ১–২ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। এ সময় গ্রাহক বাজারভিত্তিক মুনাফা পাবেন।
অমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে ফেরত: প্রথম ধাপে প্রতি গ্রাহকের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হবে অমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে। বর্তমানে তহবিলে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা রয়েছে, যা দিয়ে এই পাঁচ ব্যাংকের প্রায় ৭৫ হাজার আমানতকারীর প্রথম ধাপের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব।
নতুন ব্যাংকের মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী: নতুন ব্যাংকের মোট মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের শেয়ার হিসেবে বরাদ্দ হবে। একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে: আমানত: ১.৪২ লাখ কোটি টাকা। ঋণ: ১.৯৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১.৪৭ লাখ কোটি টাকা (৭৬%) খেলাপি।
বোর্ড গঠন: নতুন ব্যাংকের বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন—অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। বোর্ডে মোট ৭ জন পরিচালক থাকবেন—সরকারের ৫ জন, বেসরকারি খাতের ২ জন। প্রাথমিকভাবে সরকারি প্রতিনিধিরা থাকলেও ৬–১২ মাস পর বোর্ডে অভিজ্ঞ ব্যাংকার–ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একীভূতকরণের সময়সীমা: সর্বোচ্চ দুই বছরH
গভর্নরের মতে, প্রশাসকদের চারটি প্রধান কাজ হবে—দৈনন্দিন কার্যক্রম সচল রাখা, আইটি সিস্টেম সুরক্ষা ও পর্যবেক্ষণ, এইচআর মূল্যায়ন, শাখা নেটওয়ার্ক পুনর্বিন্যাস, চূড়ান্ত একীভূতকরণে ১–২ বছর লাগতে পারে। এ সময় ব্যাংকগুলোতে—পেমেন্ট, এলসি, রেমিট্যান্স, চেক নিষ্পত্তি সব কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।
আমানতকারীদের আশ্বস্ত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন—“সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক অন্য যেকোনো ব্যাংকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে। গ্রাহকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; তাদের অর্থ নিরাপদ।”













