ঢাকা || ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের খেলাপি ঋণের তথ্য পাঁচ মাসেও প্রকাশ হয়নি

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের খেলাপি ঋণের তথ্য পাঁচ মাসেও প্রকাশ হয়নি

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ০০:০১, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল-জুন (২০২৪) মেয়াদের ব্যাংকিং খাতের শ্রেণিভুক্ত ঋণ বা খেলাপি ঋণের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি। ত্রৈমাসিক শেষ হওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি। এতে খাতটির প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সাধারণত ত্রৈমাসিক শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু চলতি বছরে সে ধারাবাহিকতা ভেঙে গেছে। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তথ্য প্রকাশ করা হয় জুনে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তথ্য এখনও প্রকাশিত হয়নি, অথচ বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরেফ হোসেন খান গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, গভর্নর বিদেশে থাকায় তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে। “গভর্নর দেশে ফিরেছেন, শিগগিরই তথ্য প্রকাশ করা হবে,” বলেন তিনি।

খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪,২০,৩৩৫ কোটি টাকা, যা মোট বকেয়া ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ। ২০২৪ সালের শেষে এ পরিমাণ ছিল ৩,৪৫,৭৬৫ কোটি টাকা—অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে আরও ৭৪,৫৭০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ যুক্ত হয়েছে।

দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণ লাগামছাড়া পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর গোপনে রাখা বহু অনিয়মিত ঋণ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের ধারণা, জুন শেষে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অর্ধেকেরও বেশি ঋণ এখন খেলাপি। এ বি ব্যাংকের ক্ষেত্রে তো খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশে পৌঁছেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট ঋণ ৩৫,৯৮২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩০,১৩৮ কোটি টাকাই খেলাপি।

একইভাবে ইউনিয়ন ব্যাংকও খাতটির খেলাপি ঋণে বড় অংশীদার; মার্চ ২০২৪ শেষে এককভাবে ব্যাংকটি ২৫,৩০৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বোঝা তৈরি করেছে।

‘স্বচ্ছতা কোথায়?’ — প্রশ্ন বিশ্লেষকদের

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন এক সময়ে যখন ব্যাংকিং খাতে আস্থা সংকট চরমে, তখন তথ্য গোপন বা বিলম্বে প্রকাশ করা আরও বিভ্রান্তি তৈরি করে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইনাফিড)–এর নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, “তথ্য গোপন করা আগের সরকারের রোগ। বর্তমান সরকারের অধীনে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। মানুষকে বাস্তব পরিস্থিতি জানার অধিকার দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “সবাই জানে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তাহলে গোপনীয়তার কী দরকার? শোনা যাচ্ছে খেলাপি ঋণ ৬.৫ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। প্রকৃত অঙ্ক যা-ই হোক, তা প্রকাশ করতেই হবে।”

সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “সময়মতো তথ্য পাওয়া বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের সমস্যা। শ্রেণিভুক্ত ঋণের তথ্য সঠিক ও সময়মতো না পেলে বিশ্লেষণই করা যায় না। তথ্য দেরিতে এলে তা কার্যকারিতা হারায়।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্রুত তথ্য প্রকাশ না করলে সুদৃঢ় নীতিনির্ধারণ, খাত পুনর্গঠন এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ—সবই বাধাগ্রস্ত হবে।