
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ৭ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করায় নিট ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, জুলাই মাসে সরকারের নিট ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওভারড্রাফট সুবিধার মাধ্যমে নেওয়া ঋণ।
চলতি অর্থবছরের লক্ষ্য
২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে মোট ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণে সতর্কতা
ব্যাংকাররা বলছেন, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ায় সতর্ক রয়েছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চ সুদে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করতে হয়। ব্যয়বহুল এ প্রক্রিয়া এড়াতে সরকার তুলনামূলক কম খরচের উৎস হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভর করছে, যেখানে নীতিগত সুদের হার ১০ শতাংশ।
এর ফলে সরকারি সিকিউরিটিজের সুদের হার তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে। এ সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সচ্ছল বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণ অব্যবহৃত অর্থ সরকারি বন্ড ও ট্রেজারি বিলের মতো ঝুঁকিমুক্ত খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
জুলাই মাসের বন্ড লেনদেন
জুলাই মাসে সরকার বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহ করে। এর মধ্যে রয়েছে—২ বছরের বন্ড থেকে ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, ৩ বছরের বন্ড থেকে ৫০০ কোটি টাকা, ৫ বছরের বন্ড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা, ১০ বছরের বন্ড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং ১৫ ও ২০ বছরের বন্ড থেকে প্রত্যেকটিতে ১ হাজার কোটি টাকা।
একই সময়ে ১০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বন্ডের মেয়াদ পূর্ণ হয়। এর মধ্যে ২ বছরের বন্ড ৬ হাজার কোটি টাকা, ৫ বছরের বন্ড ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ১৫ বছরের বন্ড ১৪০ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের প্রবণতা
এর আগের অর্থবছর (২০২৪-২৫) ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকায় নেমে আসে, যা আগের বছরের (২০২৩-২৪) ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকার তুলনায় অনেক কম এবং লক্ষ্যমাত্রা ৯৯ হাজার কোটি টাকার চেয়ে অনেক নিচে। এটি ছিল গত চার বছরে সর্বনিম্ন ব্যাংক ঋণ গ্রহণ।
তবে ওই সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ নেয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে ৬৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে।
উচ্চ সুদে ব্যাংকের ঝোঁক
ব্যাংকাররা জানান, তখন ট্রেজারি বিলের সুদহার ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং বন্ডের ফলন ১২ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছিল। এ সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো সরকারের এসব উচ্চ ফলনের সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকেই বেশি নিরাপদ মনে করেছে।
অর্থবছরের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬.৪৯ শতাংশে, যা ব্যবসায় আস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। যদিও টানা ২৭ মাস ৯ শতাংশের ওপরে থাকার পর জুনে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসে, যা নীতিনির্ধারকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনে।