ঢাকা || ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বিগত সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রকৃত চিত্র আড়াল করেছেন

ফরেনসিক অডিটে উঠে এল ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ভয়াবহ চিত্র

ফরেনসিক অডিটে উঠে এল ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ভয়াবহ চিত্র

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইউনিয়ন ব্যাংকের সর্বশেষ ফরেনসিক অডিটে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির নন-পরফর্মিং লোন বা খেলাপি ঋণের হার ৩.৬২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৮০ শতাংশে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯৪.১৮ শতাংশ। এত দ্রুত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ অবনতিকে অস্বাভাবিক ও বিস্ময়কর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত অডিট প্রতিবেদনে ২০২০ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দেখানো হয় ২.৫৩ শতাংশ, ২০২১ সালে ৩.৪৯ শতাংশ, ২০২২ সালে ৩.৫৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ৩.৬২ শতাংশ। এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে ভালো অবস্থানে ছিল বলে প্রমাণ হয়। কিন্তু ফরেনসিক অডিটে উঠে আসা তথ্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র প্রকাশ করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অডিট টিম ইচ্ছাকৃতভাবে ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা আড়াল করেছে। তদন্তে জানা গেছে, ২০২০ সালে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭ এর অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন টিম ইউনিয়ন ব্যাংকে অডিট পরিচালনা করেন। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তিনি বারবার এই দায়িত্ব পান এবং প্রত্যেকবারই প্রকৃত চিত্র গোপন করে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেন।

ইউনিয়ন ব্যাংকের ভেতরের একাধিক সূত্রের দাবি, এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই ব্যাংকের আর্থিক সংকট শুরু হয়েছিল। তবে অডিট রিপোর্টে এসব গোপন রাখতে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, এ জন্য কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

অভিযোগ আছে, মোঃ আক্তারুজ্জামান শুধু ইউনিয়ন ব্যাংক নয়, এস আলম নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য ব্যাংকের অডিটের দায়িত্বও পালন করতেন। এই সুযোগে তিনি নিয়োগ, বদলি থেকে শুরু করে সিএসআর খাতের অর্থ আদায়ের মতো অনৈতিক প্রভাব খাটাতেন। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধ হলে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

এদিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাম্মেল ২০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও অডিট করছিলেন মোঃ আক্তারুজ্জামান। 

গত পাঁচ বছর তিনি ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭ এ দায়িত্বে ছিলেন, যা মূলত দেশের বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকগুলো তদারকি করে। এ সময় তদবির ও প্রভাব খাটিয়ে বিভাগে টিকে ছিলেন। বর্তমানে তাকে সরকারি ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগে বদলি করা হলেও, সূত্র বলছে, এ বদলি ঠেকাতে তিনি মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে আক্তারুজ্জামানের মতো আরও অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাদের হাত ধরেই দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফরেনসিক অডিটে প্রকাশ পাওয়া চিত্র প্রমাণ করে, আর্থিক খাতের ধস রোধে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।

city-bank
city-bank