
কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত (সিএমএসএমই) এখন নতুন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ খাতে ঋণের বিপরীতে সাধারণ প্রভিশন বা সংরক্ষণ বাড়ানো হয়েছে চার গুণ। ফলে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এ বিধান অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে এখন সিএমএসএমই ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এর আগে এ হার ছিল ০.২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আগে ব্যাংকগুলো সিএমএসএমই খাতে ০.২৫ শতাংশ সাধারণ প্রভিশন রাখত। কিন্তু এখন ১ শতাংশ রাখতে হচ্ছে। এ অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন সিএমএসএমই ঋণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে, যা খাতটির জন্য ক্ষতিকর।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, মোট ঋণের মধ্যে সিএমএসএমই খাতের অংশীদারিত্ব ক্রমশ কমছে। ২০২০ সালে এ হার ছিল ২১ শতাংশ। পরে ২০২১, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তা নেমে আসে যথাক্রমে ১৯.৮০, ১৯.৫৪, ১৯.১২ ও ১৮.৪০ শতাংশে। চলতি বছরের মার্চ শেষে হার আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৮৪ শতাংশে।
এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) গভর্নর ড. আহসান এইচ. মন্সুরের কাছে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। এবিবি চেয়ারম্যান এবং সিটি ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেন, “প্রভিশন বাড়ানোর কারণে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ আরও বাধাগ্রস্ত হবে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণের অনুপাতও কমছে।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণের হার নেমে এসেছে ৩৬.৬১ শতাংশে, যা কয়েক মাস আগেও ছিল ৩৭.২৯ শতাংশ। তার প্রস্তাব, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) মতো সিএমএসএমই খাতেও পূর্বের প্রভিশন হার বহাল রাখা উচিত।
ব্র্যাক ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন বলেন, “সাধারণ প্রভিশন ০.২৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে। এর ফলে সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস পাওয়া অবশ্যম্ভাবী।”
আজ বুধবার এবিবি নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন—প্রভিশন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের আশায়।