
দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায় আটকে থাকা ১ হাজার ২৫টি ঋণখেলাপি মামলায় জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের জন্য অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সূত্র জানায়, অর্থঋণ আদালত থেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এসব গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহু বছর ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে।
গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানিয়েছে, তাদের অধীনস্থ আটটি দফতর ও সংস্থা এসব মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়িত না হওয়ায় খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে।
চিঠির সঙ্গে মামলাগুলোর বিস্তারিত তালিকাও পাঠানো হয়েছে, যাতে দ্রুত পরোয়ানা বাস্তবায়ন করা যায়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গত মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেই বৈঠকে অর্থঋণ আদালত বছরের পর বছর ঝুলে থাকা শত শত মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনা ও দ্রুত নিষ্পত্তির উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে অনিষ্পন্ন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তালিকা পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এটি ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ ১০০টি ঋণখেলাপি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গৃহীত বিশেষ কর্মসূচির অংশ। এসব মামলার মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
শীর্ষ ১০০ মামলার চিত্র:
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ১০টি মামলায় জড়িত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩,৭১৯ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ১০টি মামলায় ১৫,১৫১ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৫,৬৭৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৩,৯৭৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১০টি মামলায় ১,৫৭৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৩,৭৪৭ কোটি টাকা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) আটটি মামলায় ৮৫৯ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ১০টি মামলায় ২,৩৯৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৮৭৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দুটি মামলায় ৮৩.৮ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১০টি মামলায় ২৯৩ কোটি টাকা জড়িত।
সূত্র জানায়, বৈঠকে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরি, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সম্পৃক্ততা, ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা—এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে প্রতিটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত থাকবেন এবং ব্যাংকের আইনজীবী কার্যকরভাবে মামলার শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন কিনা তা তদারকি করবেন।
এছাড়া, ঋণখেলাপিরা একাধিক রিট আবেদন করে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বাধা দিতে বা মামলা দীর্ঘায়িত করতে না পারে, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে শিগগিরই এক বৈঠক আহ্বান করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন সম্পত্তির তালিকা পাঠাতেও বলা হয়েছে, যেগুলো নিলামে বিক্রি হলেও এখনো নামজারি (মিউটেশন) সম্পন্ন হয়নি। এসব ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, বীমা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রতি মাসে ঋণখেলাপি মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “অনেক মামলা সময়মতো নিষ্পত্তি হয় না মূলত তদারকির ঘাটতি ও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে। এখন আমরা আরও কঠোর অবস্থান নিতে চাই, যাতে দ্রুত মামলাগুলোর নিষ্পত্তি ও অর্থ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।”