
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা মজুত সেপ্টেম্বর মাসে নেমে এসেছে ৩.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের মাসের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক ডলার কেনার কারণে এ হ্রাস ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও মানি মার্কেট বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার-টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সম্প্রতি আন্তঃব্যাংক স্পট মার্কেট থেকে নিলামের মাধ্যমে নিয়মিত ডলার ক্রয় করছে। এই নীতিগত হস্তক্ষেপের প্রতিফলনই ব্যাংকগুলোর ফরেক্স মজুতে পড়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে ব্যাংকগুলোর হাতে বৈদেশিক মুদ্রা মজুত ছিল ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা সেপ্টেম্বরের শেষে নেমে আসে ৩.৯৪ বিলিয়নে।
গত কয়েক মাসের চিত্র অনুযায়ী, মার্চে ব্যাংকগুলোর ডলার মজুত ছিল ৫.১১ বিলিয়ন ডলার, এপ্রিলে ৪.৫০ বিলিয়ন, মে মাসে ৪.৯৮ বিলিয়ন, জুনে ৪.২৫ বিলিয়ন, এবং জুলাইয়ে ৪.২৭ বিলিয়ন ডলার।
বছর টু বছর ভিত্তিতে সেপ্টেম্বর মাসে ডলার মজুত ২৬ শতাংশ কমেছে—২০২৪ সালের একই সময়ে মজুত ছিল ৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও, ১৩ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল রাখতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি কিনেছে। এ কারণেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে ডলার কমেছে।”
তিনি আরও জানান, এই ডলার কেনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে যেমন বাজারে ডলারের চাহিদা ও দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর টাকার তারল্যও বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ২.১৩ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে এবং এর বিপরীতে প্রায় ২৫,৯০০ কোটি টাকা ব্যাংকিং খাতে প্রবাহিত করেছে, যা ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কিছুটা কমাতে সহায়তা করছে।
এ বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, “আমদানি কমে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর ডলার জমে ছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনছে, যাতে বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকে ও ফরেক্স বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রবাসী আয়ের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ ও ডলার বাজারে অতিরিক্ত ওঠানামা রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর ওপেন ইউএসডি পজিশনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে বা অতিরিক্ত ডলার জমা করতে বলছে।”
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনার পাশাপাশি সম্প্রতি আমদানির আদেশ বাড়ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে ডলার মজুত আরও কমছে।”
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে নতুন এলসি (আমদানির আদেশ) খোলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.২২ বিলিয়ন ডলারে, যা আগস্টের ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। জুলাইয়ে এই পরিমাণ ছিল ৬.০৩ বিলিয়ন এবং জুনে ৪.১৪ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া, ব্যাংকগুলোর নেট ওপেন পজিশন তিন মাসের ব্যবধানে ১.২০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এখন প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে বলে তথ্য বলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ডলার কেনা নীতিকে একদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে দেখা হলেও, অন্যদিকে এটি ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমিয়ে দিয়েছে—যা আমদানির ব্যয় মেটানোয় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।