সরকারি নীতিমালা হালনাগাদের পর এবার বিশেষ সুবিধায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাচ্ছে দুরবস্থায় থাকা দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী গাজী গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের ঋণ পুনঃতফসিল কমিটি সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে গোষ্ঠীটির ব্যাংক লেনদেন নির্বিঘ্ন রাখার পাশাপাশি এর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জামিনদারবিহীন এই "বেইল-ইন" প্যাকেজের আওতায় গাজী গ্রুপকে ১১ বছরের মেয়াদে ঋণ পরিশোধের সময় দেওয়া হচ্ছে, যার প্রথম দুই বছর থাকবে অনুকম্পা বা ‘গ্রেস পিরিয়ড’।
এর আগে একই ধরনের সুবিধা পেয়েছে আরেক বড় শিল্পগোষ্ঠী নাসা গ্রুপ, যার মালিকও বর্তমানে কারাবন্দি। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পেয়েছে ওই রপ্তানিমুখী গোষ্ঠী।
গাজী গ্রুপের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২১৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য মোট ঋণের ২ শতাংশ অগ্রিম জমা দেওয়ার শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, গাজী গ্রুপ ও এর সাতটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশের ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২,৬২৫ কোটি টাকার ঋণগ্রস্ত।
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত গাজী গ্রুপ বর্তমানে উৎপাদন, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, গণমাধ্যম, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং রাবার-টায়ার শিল্পসহ বহুমাত্রিক ব্যবসায় জড়িত। গোষ্ঠীর প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজী ইন্টারন্যাশনাল, গাজী ট্যাংকস, গাজী পাইপস, গাজী ডোর্স, গাজী অটো টায়ার্স, গাজী রিনিউয়েবল লিমিটেড, গাজী টেলিভিশন, গাজী নেটওয়ার্কস এবং গাজী কমিউনিকেশনস লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃতফসিল কমিটি জানিয়েছে, ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা নিতে হলে গোষ্ঠীটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অডিট প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে—যাতে গত বছরের ছাত্র আন্দোলন-পরবর্তী অস্থিরতার সময় রূপগঞ্জ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব এবং বীমা দাবির তথ্য প্রতিফলিত থাকবে।
কমিটির এক সদস্য বলেন, “বীমা দাবি, আগুনের আগে ও পরে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এবং ব্যবসা পুনরায় সচল করার জন্য নতুন অর্থায়নের সামর্থ্য—সবই ওই অডিট রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
প্রধান ঋণদাতা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংককে প্রতিবেদনটি যাচাই করে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করতে বলা হয়েছে, যাতে পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত গাজী গ্রুপের টায়ার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। মালিক ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারখানাটিতে একাধিকবার লুটপাট হয়, যারই পরিণতি ছিল সেই অগ্নিকাণ্ড। রাবার ও টায়ারের মতো দাহ্য পদার্থে ভর্তি স্থাপনাটি দমকলের নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
গোষ্ঠীটির দাবি, গ্রেপ্তার মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী ১৯৮০ সাল নাগাদ টায়ার উৎপাদনে প্রবেশ করেন। ২০০২ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত গাজী অটো টায়ার্স ছিল দেশের প্রথম বাণিজ্যিক যানবাহনের টায়ার উৎপাদনকারী কারখানা।
বর্তমানে কোম্পানিটি দেশের রিকশা, তিনচাকা ও ছোট বাণিজ্যিক যানবাহনের টায়ার বাজারের ৭০ শতাংশ, বাস-ট্রাক সেগমেন্টে ১৫–২০ শতাংশ, এবং মিনিবাস টায়ারে ৬৫ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছিল। প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার বাজারমূল্য ও ২,৬০০ কর্মী নিয়ে গাজী টায়ার্স ২০২৫ সালের মধ্যে বছরে ২৪ লাখ টায়ার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল।















