বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে ব্যাংক এশিয়া পিএলসি-এর দুটি রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবে গুরুতর অনিয়মের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হিসাব দুটিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণ নগদ মার্কিন ডলার জমা দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তীতে বিদেশে খরচ করা হয়।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হোসেন বলেন, এখানে অর্থপাচারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ব্যাংকের ভুলে এমনটি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের জরিমানা করেছে। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না।
বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিধান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি নাগরিক প্রতি ক্যালেন্ডার বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশে ব্যয় করতে পারেন। তবে আরএফসিডি হিসাবে জমাকৃত অর্থ পুরোটাই বিদেশে ব্যবহারযোগ্য।
নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার সময় যদি কোনো ব্যক্তি ১০ হাজার মার্কিন ডলারের কম বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, তা নিজের কাছে রাখা, ব্যাংকে বিক্রি করা কিংবা আরএফসিডি হিসাবে জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ১০ হাজার ডলারের বেশি আনলে তা অবশ্যই এফএমজে ফরমে ঘোষণা দিতে হয় এবং দেশে আসার ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা যায়, কিছু গ্রাহক এই নিয়ম উপেক্ষা করে একই আরএফসিডি হিসাবে বারবার এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে নগদ ডলার জমা দিয়েছেন।
ফারহানা করিম নামের এক গ্রাহক একাধিকবার—কখনো একই দিনেও—১০ হাজার ডলারের বেশি নগদ অর্থ ঘোষণা ছাড়াই জমা দেন। এসব জমা অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং সব মিলিয়ে পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তিনি বিদেশে অবস্থানকালেও দেশের ভেতর থেকেই কিছু ডলার জমা দেন। পরে এসব অর্থ তার আরএফসিডি হিসাবের বিপরীতে ইস্যুকৃত কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে খরচ করা হয়।
অন্যদিকে, আলায়না চৌধুরী নামের আরেক গ্রাহক বিদেশে অবস্থানকালে অন্যের মাধ্যমে ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার নগদ তার আরএফসিডি হিসাবে জমা দেন। পরবর্তীতে সেই অর্থও বিদেশে খরচ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এসব লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার নিয়মবহির্ভূত এবং আরএফসিডি সুবিধার অপব্যবহারের স্পষ্ট প্রমাণ। দেশীয় কার্ব মার্কেট থেকে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে জমা করা হলেও এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশে অর্থ ব্যয় করা, যা নিয়মবিরুদ্ধ।
তদন্তে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এ ধরনের ধারাবাহিক অনিয়ম সম্ভব নয়। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক এশিয়া পিএলসি-কে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করে।
ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অনিয়ম জনগণের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করে এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে। তাদের মতে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কার্যকর নজরদারি ও কঠোর তদারকি জরুরি।














