পরামর্শক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অর্থ ছাড়ে অনীহায় ঢাকার অন্যতম কৌশলগত রেল প্রকল্প—কামালাপুর–টঙ্গি এবং টঙ্গি–জয়দেবপুর নতুন রেললাইন নির্মাণ—বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অনুপস্থিত রয়েছে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে। এ অবস্থায় নতুন ট্র্যাক স্থাপন ও কাজের তদারকি ব্যাহত হওয়ায় পুরো প্রকল্পে কমপক্ষে দুই বছরের বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “২০২৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হলে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালাতে হবে। কিন্তু পরামর্শক না থাকায় এবং প্রকল্প কার্যালয়ে জনবল সংকটে যথাযথ তদারকি ও কাজের মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।”
তিনি আরও জানান, ভারতের এক্সিম ব্যাংক এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা (২১.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ ছাড় করতে রাজি হয়নি, ফলে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী—বিশেষত ব্যালাস্ট—সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (PIC) সভায় প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দ্রুত জনবল নিয়োগ অথবা বিকল্পভাবে বুয়েট (BUET) বা আইআইএফসি (IIFC)-এর মতো সরকারি বিশেষায়িত সংস্থার পরামর্শক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা সংশোধন এবং তৃতীয় দফা প্রকল্প সংশোধন করে ভারতের ঋণ বাদ দিয়ে দেশের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ওই ২১.৭৮ মিলিয়ন ডলারের ব্যয় মেটানোর প্রস্তাবও এসেছে।
প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদন পায় ৮৪৯ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে, যার ৮২ শতাংশ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। লক্ষ্য ছিল ঢাকা–জয়দেবপুর রুটে রেল চলাচলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
তবে দীর্ঘ ১৩ বছরে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৪৩ কোটি টাকা—যা মূল প্রাক্কলনের প্রায় চারগুণ। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৫২১ কোটি টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ২,৮২১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত শারীরিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৪.৬১ শতাংশ, আর ব্যয় হয়েছে ১,১০৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৩৩.১৮ শতাংশ।
প্রকল্পের প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল ভারতের Aarvee–Ayesa JV, যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের আগস্টে। পরে একই প্রতিষ্ঠানকে Single Source Selection (SSS) পদ্ধতিতে নতুন চুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে।
যদিও ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরেই NOC পাওয়া যায় এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আলোচনা শেষ হয়, কিন্তু রেল মন্ত্রণালয় এখনো Tk ৫৯.৬৯ কোটি টাকার প্রস্তাব সরকারি ক্রয় পরামর্শক কমিটিতে পাঠায়নি।
এদিকে ভারতের AFCONS–KPTL JV বর্তমানে প্রায় ২০৮০ কোটি টাকার মূল সিভিল ওয়ার্কস চুক্তি বাস্তবায়ন করছে। তবে তৃতীয় ভেরিয়েশন অর্ডার অনুমোদনে এক্সিম ব্যাংকের বিলম্ব প্রকল্পের অগ্রগতি আরও ১৮–২৪ মাস পিছিয়ে দিতে পারে।
এ পর্যন্ত ৫০.৫ কিমি বাঁধ, ৪৯ কিমি ট্র্যাক, দুটি বড় সেতু, ১৭টি কালভার্ট এবং দুটি স্টেশন ভবন নির্মিত হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি যথাক্রমে ৩৭ শতাংশ (শারীরিক) এবং ৩৬.৯৫ শতাংশ (আর্থিক)।
ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়া পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি সভায় বলেন, “প্রকল্পটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পন্ন হলে ঢাকা–উত্তরাঞ্চল রুটে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচলে জট কমবে এবং পরিবহন দক্ষতা বাড়বে।”











